অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ( ও.সি.ডি.) সারাবেন কিভাবে?

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ( ও.সি.ডি.) সারাবেন কিভাবে?

Management and Treatment of  Obsessive Compulsive Disorder (OCD) 

Author : Dr. Jakir Hossain Laskar, PhD

ও.সি.ডি. বা আবেশিক বায়ু একধরনের মানসিক বায়ু-রোগ, যাকে মনরোগের পরিভাষায় সবচেয়ে জটিল ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস বলা হয়। এই ধরনের রোগীরা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো চিন্তাকে বারংবার মনে আনাগোনা করতে দিতে বাধ্য থাকে। কোনো একই শব্দের বারবার উচ্চারণ বা কোনো ভাবনা-ধারণার বারবার মনের গহীনে আনাগোনার অভ্যাসকে বলে ও.সি.ডি.। বিশেষ বিশেষ ধরনের চিন্তা, ভাবনা, ফর্ম ও শব্দকে কেন্দ্র করে এই রোগের প্রকাশ হয়।

ও.সি.ডি. রোগীর ব্যক্তিত্ব কেমন ধরনের হয়?

এরা জীবনে আত্মকেন্দ্রিক, অন্তর্মুখী ও নিজের সম্পর্কে সদা সজাগ থাকে। আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এরা একদম পছন্দ করে না। এরা সব কাজ নিখুঁতভাবে করতে চায়। রোগের লক্ষনগুলির মাধ্যমে ও.সি.ডি. রোগীরা জীবনের ভুল-ত্রুটিগুলিকে প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করে। জীবনে শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যাবহারিক জীবনে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারে না। মনের আবেগের বহিঃপ্রকাশের অভাবের জন্যে এদের রসকষহীন বলে হয়, এদের জীবনে তাই হাস্যরসের স্থান খুবই সীমিত।

ও.সি.ডি. রোগের লক্ষন কি কি?

১। অবসেসিভ থটস বা আবেশিক চিন্তা ভাবনায় রোগী মথিত হয়। রোগীর মনের ভিতর একই বাক্য বা গানের সুর বারংবার তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেসে আসে, কোনোভাবেই তিনি তার থেকে বেরোতে পারেন না।

২। রোগীর মধ্যে জটিল কিছু রোগ সম্পর্কে ভয়-মিশ্রিত চিন্তা বারবার দেখা দেয়। তিনি ভয় পেতে থাকেন, তাঁর হয়তো ক্যানসার, এডস বা সিফিলিস হবে – যদিও এসব তাঁর অমূলক ভয়। 

৩। দেবদেবী সম্বন্ধে অশ্লীল চিন্তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এদের মনে বাসা বাঁধে। চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে কিছুক্ষণ পরে মনে হয়, চিঠি বোধ হয় ফেলা হয়নি।

৪। এই রোগী সংশয় ও সন্দেহের বশে বাধ্য হয়ে একই কাজ বারংবার করে। বাড়ীর বাইরে বেরনোর সময় হয়তো লাইট-ফ্যান বন্ধ করেছে – কিন্তু কিছুদূর গিয়ে তাদের মনে হয় আলো-পাখা বন্ধ করা হয়নি। আবার বাড়িতে ফিরে এসে পরীক্ষা করে দ্যাখে।

৫। কেউ কেউ এরা আবেশিক কর্মতাড়নায় অদ্ভুত ও মারাত্মক আচরণ করে বসে। অনেকের শিশুদের দেখলেই তাদের গলা টিপে দিতে ইচ্ছে হয়। অদ্ভুত ইচ্ছায় কেউ কেউ নিজেকে ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দেবার কথা ভাবে, কেউ বা উঁচু বাড়ীর ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার কথা ভাবে। যদিও বাস্তবে এ সব কাজ রোগী কখনোই করে না। অনেক রোগী আবার মনে করে রাস্তা দিয়ে তার সামনে যারা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে লাথি মারলে ভালো হয়। কেঊ কেঊ রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দু-পাশের বাড়ীগুলোর দরজা-জানালায় লাঠি বা অন্য কিছু দিয়ে আঘাত না করে যেতে পারে না।

ও.সি.ডি. রোগীদের কী ধরনের আতঙ্কের লক্ষণ থাকে?

বিভিন্ন ধরণের আতঙ্ক এই রোগীদের গ্রাস করে। এক একটি বিশেষ বস্তু বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে তাঁর মনে মারাত্মক ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত ভাব দেখা যায়। অনেকের মধ্যে ক্ল্যসট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গার ভয় প্রচণ্ড পরিমাণে থাকে। যার ফলে রোগী ভীড় ট্রেনে-বাসে উঠতে ভয় পায়। এছাড়া, ফাঁকা জায়গায় একা যেতে ভয় (অ্যাগোরাফোবিয়া), অন্ধকারের ভয় (নিক্কোফোবিয়া), কঠিন রোগ-ব্যাধির ভয় (প্যাথোফোবিয়া), একাকীত্বের ভয় (মোনোফোবিয়া), রক্ত দেখলে ভয় (হেমাটোফোবিয়া), ঊচ্চস্থানের ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) ইত্যাদি বহুবিধ আতঙ্ক ও.সি.ডি. রোগীদের মধ্যে বর্তমান থাকে। এই ধরনের আতঙ্ক-জনিত উৎকণ্ঠার শারীরিক লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয় দমবন্ধ ভাব, বুক-ধড়ফড়ানি, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

কি কারণে ও.সি.ডি. হয়?

১। মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বেসাল গ্যাংলিয়ার কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হলে এই রোগে অদ্ভুত সব অবসেশন ও কম্পালশন দেখা যায়।

২। আমাদের অবদমিত অসামাজিক প্রবৃতিগুলো যখন অবদমনের বাধাকে অতিক্রম করে সজ্ঞানে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন বিশেষ কিছু মানসিক প্রক্রিয়া তাদের বাধা দেয় – যার ফলশ্রুতিতে মনঃসমীক্ষার তত্ত্ব মেনে দেখা দেয় অবসেসিভ কম্পালসিভ নিউরোসিস।

৩। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে – মস্তিষ্কের স্নায়ু-রাসায়নিক সেরোটোনিন বা গ্লুটামেট-এর বিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ থেকেও ও.সি.ডি. হতে পারে।

ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে কিছু পরামর্শ?

১। নিয়মিত রিল্যাক্সেশন টেকনিক অভ্যাস করুন। যোগা, প্রাণায়াম, মাইণ্ডফুল মেডিটেশন, ডীপ-ব্রিদিং এক্সারসাইজ এই রোগীদের স্ট্রেস ও টেনশন কমানোর জন্যে কার্যকরী।

২। পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়ামচর্চা করতে হবে। অবশ্যই বর্জন করতে হবে অ্যালকোহল আর নিকোটিন।

৩। ও.সি.ডি. সাপোর্ট-গ্রুপের সদস্য হয়ে, তাদের পরামর্শ মেনে দিনযাপন করলে রোগের মারাত্মক কর্মতাড়না থেকে রেহাই মিলবে।

কি ধরনের খাবার ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে নিষিদ্ধ?

১। সুগারি ফুড ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে ক্ষতিকর। সুগারি ড্রিঙ্ক, সোডা, ক্যান্ডি, অন্যান্য মিষ্টি এই রোগীদের খাওয়া বারণ। এতে উৎকণ্ঠা আর প্যানিক অ্যাটাক বাড়তে পারে।

২। এই রোগীদের কফি অ্যালকোহল খাওয়া একদম নিষেধ। দু’-এক কাপ চা চলতে পারে।

৩। সব ধরনের ফল ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে ভালো।

৪। ও.সি.ডি. যেহেতু সবচেয়ে কঠিন ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস, এই রোগীদের খাদ্যতালিকায় প্রসেসড মীট ও ফিশ আর মিষ্টিযুক্ত ডেজার্ট  রাখবেন না। এতে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বাড়তে পারে। অন্যান্য প্রসেসড ফুডও এদের খাদ্য তালিকা থেকে বর্জন করতে পারেন।

ও.সি.ডি. রোগের চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সাইকোলোজিক্যাল কাউন্সেলিং ও বিশেষ ধরনের সাইকোথেরাপি কার্যকরী। আবেশিক কর্মতাড়না যখন জটিল আকার ধারন করে তখন কনস্টিটিউশনাল হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের সাহায্যে চিকিৎসা-প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হয়। দ্রুত রোগ-লক্ষন প্রশমনে থেরাপিউটিক হোমিওপ্যাথিক রেমিডিও খুবই ফলদায়ক।

Dr. Jakir Hossain Laskar: is an internationally-acclaimed Indian Homoeopath in Neuro-Psychiatry, Memory Doctor and Counseling Psychotherapist. He has been treating all types of Nerve and Mental diseases with the help of Classical Homoeopathy since 2001. Besides, he has been doing Psycho-Counseling and giving Homoeopathic treatment for students with abnormal behaviour, memory and concentration problems, learning disability, etc. Having finished his education in Homoeopathic Medical Science from Central Council of Homoeopathy (CCH) recognized by the Govt. of India, he did research-work in a special field of Psychology. As a recognition of his scientific research, he earned his PhD degree in Psychological Counseling and Psychotherapy in 2008. He is also trained in several disciplines of Neurology and Psychiatry from best British and American Universities through distant mode including Harvard Medical School (USA), King’s College London, Birmingham University (UK), etc. For a long period of time, he had been the Editor-in-Chief of a quarterly Mental Health Journal named ‘Mon Niye’ published from Kolkata. Besides practicing Neuro-Psychiatry in Homoeopathy, he has been attached as a Visiting Lecturer in the Post-Graduate Psycho-Counseling Dept. of a reputed private educational institute.