How is Health adversely affected for excessive Mobile Use?
Author : Dr. Jakir Hossain Laskar, PhD
মোবাইল ফোন ছাড়া এযুগে জীবন অচল। কিন্তু এই ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে যে সব স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকাও জরুরী। প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা আমাদের অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। কথা বলা ছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার, গান শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা, মিনি-কম্পিউটার হিসাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সুবিদিত। সবার হাতে হাতে তাই আজ সুদৃশ রঙিন নানান রকমের সেলুলার ফোন। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা দরকার ইলেক্ট্র-ম্যাগনেটিক রশ্মি বিচ্ছুরণের কারণে উদ্ভুত শারীরিক ও মানসিক সমস্যা গুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়।
শারীরিক ও মানসিক সমস্যা
১. রেডিয়েশান কার্সিনোজেনিকঃ দ্য ইন্টারন্যাশানল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার-এর গবেষনা লব্ধ সিদ্ধান্ত হল, মোবাইল ফোনের রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি খুবই উচ্চমানের কার্সিনোজেনিক (ক্ষতিকারক)। এই রেডিওশান থেকে ব্রেন ক্যানসার ও চোখের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
২. কানের সমস্যাঃ ফোনে একটানা অনেকক্ষণ কথা বলতে অভ্যস্ত যারা, তাদের ইনার ইয়ার ড্যামেজ ও ককলিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া হেয়ারিং লস্-এর সমস্যা ও হতে পারে। ইউরোপের ‘বায়োইলেক্ট্রম্যাগনেটিক্স’-এর একদল বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাঁদিকের কানে ফোন ধরে কথা বলতে। এতে ব্রেনের ক্ষতি কম হয়। এই মত সমর্থন করে অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অটোল্যারিঞ্জোলজি-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, ডানদিকের কানে ফোন ধরে কথা বললে মস্তিষ্কে সরাসরি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. ব্রেন ডিজিজঃ মোবাইল ফোনের বিচ্ছুরণ থেকে মাথায় যন্ত্রণা, মাথা-ঘোরা ছাড়াও ব্রেন টিউমারও হতে পারে। অ্যাকাউস্টিক নিউরোমা, ম্যালিগন্যান্ট গ্লিয়োমা ইত্যাদির সম্ভাবনার কথা ও গবেষক মহলে জোর চর্চা হতে শোনা যায়। উল্লেখ্য, এইসব বিভিন্ন ধরনের ব্রেন-টিউমার হবার প্রবণতা বড়দের থেকে ছোটদের বেশি থাকে। সুইডেন-এর ওরিব্রো হসপিটাল-এর গবেষনা থেকে জানা যাচ্ছে- ছোটদের ব্রেন-এর ‘স্কাল বোন ডেনসিটি’ কম থাকে আর ‘ব্লাড ব্রেন ব্যারিয়ার’ কম কার্যকরি থাকে বলে তিনগুন বেশি রেডিয়েশান শোষন করতে পারে। ছোট ছেলে-মেয়েদের তাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না দেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।
৪. হোয়াটস অ্যাপাইটিসঃ নববর্ষে হোয়াটস অ্যাপ সার্ভিসের মাধ্যমে প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব দের আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা ম্যাসেজ করলেন। সন্ধ্যাবেলা দেখলেন আপনার কাঁধ-কবজি-ঘাড়ে খুব ব্যাথা-যন্ত্রণা হতে শুরু করেছে।
৫. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি সমস্যাঃ অনেকক্ষন ধরে মোবাইলে নেট ঘাঁটলে নানাবিধ স্ক্রিন ভিশন সিনড্রোম দেখা দেয়। যেমন, চোখ লাল হওয়া ও জ্বালা ভাব, আই-স্ট্রেন, ড্রাই-আই, আই ইরিটেশন, ঝাপসা দৃষ্টি, রাতকানা ইত্যাদি হতে পারে।
৬. রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম–এর সমস্যাঃ মোবাইল ফোন থেকে নিঃসৃত হয় পারফ্লুয়উরো-অকট্যনোইক অ্যাসিড নামক এক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল, যা থেকে স্ত্রী জননতন্ত্রের কার্যক্ষমতা ব্যহত হয়। এর থেকে এমনকি ইউটেরাস, ওভারি, ফ্যালোপিয়ান টিউব ইত্যাদির ঘঠনতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। সন্তানধারন কালে যে সমস্ত নারী অত্যধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের ভূমিষ্ঠ সন্তান পরবর্তীতে এ।ডি।এইচ।ডি-র মত বিহেভিয়ার প্রবলেমের শিকার হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, স্পার্ম কাউন্ট ও স্পার্ম মটিলিটি কমে যেতে পারে, এমনকি অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রিয়াক্টিভ মলিউকিলার প্রজাতির স্পার্মগুলোর ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড ড্যামেজ হয়ে স্পার্ম মরফোলজি বিকৃত হয়ে যেতে পারে।
৭. মানসিক সমস্যাঃ অত্যধিক সেলুলার ফোন ব্যবহার থেকে মানসিক ক্লান্তি, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ, ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার ঘটনা ও ঘটতে পারে।
৮. রিং-টোন অ্যাংজাইটিঃ মাত্রাধিক মোবাইল আসক্তির কুফলে এই মানসিক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যাক্তি ছোটখাটো যে কোনো শব্দে সতর্ক হয়ে পড়ে, ভাবে, মনে হয় তার মোবাইলের রিং-টোন বাজছে। অনেকে এমনও আছেন, এক-দু’ঘন্টা ফোন না আসলে যারপরণাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
৯. নো-মোবাইল ফোবিয়াঃ ব্যাক্তিগত জীবনের যাবতীয় তথ্য, দরকারী কন্ট্যাকট নাম্বার ইত্যাদি সবই এখন মোবাইলে রাখা থাকে। এই আতঙ্কে আক্রান্ত ব্যাক্তি সর্বদা ভয়বিহ্বল হয়ে থাকে, এই বুঝি তার সেলফোনটা হারিয়ে গেল।
১০. সোশ্যাল সাইট অ্যাডিকশনঃ জনপ্রিয় স্মার্ট ফোনের কল্যানে আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার, লিংকইন, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াস্টঅ্যাপ ইত্যাদি সোশাল সাইটের মাত্রাছাড়া আসক্ত হয়ে পড়ছি। এই অ্যাডিকশন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া-শোনার মারাত্মক ক্ষতি হয়, বড়দের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, ক্ষিদে নষ্ট হয়, মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে।
১১. মেমরি প্রবলেমঃ ফোনে বেশি কথা বলায় অভ্যস্ত যারা, তাদের মস্তিষ্কে গ্লুকোজ ধারণ কম হয়। যার ফলে স্প্যটিয়াল ওয়ার্কিং মেমরি ব্যহত হয়।
১২. অন্যান্য সমস্যাঃ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে ঘাড়ের যন্ত্রণা, পিঠ ও কোমরের যন্ত্রণা, জয়েন্ট-পেন, ট্যকিকার্ডিয়া বা হৃৎপিণ্ডের গতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রতিকারের উপায়
১. মোবাইল ফোন হচ্ছে কম পাওয়ারের রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিটার, যা ৪৫০ থেকে ২৭০০ মেগাহার্য (MHz) বিচ্ছুরণ ঘটায়। ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরে রেখে মোবাইল ব্যবহার করলে রেডিয়েশনের ভয় থাকে না।
২. শরীর থেকে ফোন যথাসম্ভব দূরে রেখে কথা বলার অভ্যাস করলে, কান ও হাতে স্কিন ক্যানসারের ভয় থাকে না।
৩. স্পিকার অন্ করে মোবাইলে একটু দূর থেকে কথা বলার অভ্যাস করতে পারলে ভালো।
৪. তার যুক্ত হেড সেট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৫. কানে ব্লু-টুথ লাগিয়ে কথা বলা নিরাপদ নয়। কারণ ব্লু-টুথ থেকে সমমাত্রার রেডিয়েশন নির্গত হয়।
৬. টেক্সট মোর, টক লেস (text more talk less) – ছোট ছোট তথ্য আদান প্রদানের জন্য ফোন না করে টেক্সট ম্যাসেজ করুন। ইন্টারনেট অ্যাকসেস-এর সুযোগ থাকলে মেল করে ভাব-বিনিময় করা যেতে পারে।
৭. পকেটে মোবাইল রাখবেন না। মোবাইলের ভাইব্রেশন থেকে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা হতে পারে এবং স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে পারে।
৮. মোবাইলে সিগন্যাল যখন কম থাকে তখন রেডিয়েশন বেশী হয়। সেজন্যে বদ্ধস্থানে ফোন করবেন না।
৯. মোবাইল ফোন কেনার সময় SAR নম্বর (Specific Absorption Rate) দেখে কিনবেন। SAR লেভেল ১.৬ ওয়াট পার কিলোগ্রামের কম হলে তবেই তা নিরাপদ। মনে রাখবেন, SAR নম্বর যত কম হবে তত ভালো।
১০. বেড-টাইম মোবাইল কারফিউ – কেউ কেউ রাতে শুতে যাবার আগে মোবাইল নিয়ে অতিরিক্ত ঘাঁটাঘাটিতে ব্যস্ত থাকেন। ঘুমের দফারফা আটকাতে এই কু-অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ক্ষতি হয়।
১১. ফেসবুক হলিডে – এক দু’ মাস পরে পরে অন্তত পক্ষে দিন তিনেক মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
১২. সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্টিং – দশদিন অন্তর অন্তর সম্পূর্ণ একটা দিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
১৩. ইউজ মোবাইল হোয়েন ইউ আর মোবাইল (use mobile when you are mobile) – আপনি যখন বাইরে কাজে-কর্মে আছেন তখন পরিমিত মোবাইল ব্যবহার করুন। ঘরে থাকলে ল্যান্ড-লাইনে কথাবার্তা বলুন।
১৪. সারাদিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি মোবাইলে কথা বলবেন না।
১৫. ডিসইনফেক্ট ইওর মোবাইল – বিভিন্নভাবে আপনার মোবাইলে নানান ধরনের জীবানু বাসা বাঁধে। সঠিকভাবে প্রতিদিন সেলফোনকে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১৬. দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করুন – বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অটুট রাখে। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গাজর, ক্যুরকামিন-সমৃদ্ধ হলুদ, ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট অ্যালিসিন-সমৃদ্ধ রসুন ইত্যাদি মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিবিধ মারণরোগের প্রভাবমুক্ত রাখে। আনারসের ব্রোমেলোইন, ইমিউন বুস্টিং অ্যামাইনো অ্যাসিডদের কার্যক্ষমতাকে অটুট রাখে। বাজারে পাওয়া গেলে কাঁচা আমলকী, কাঁচা গাজর, আনারস খান। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ২ চামচ করে কাঁচা হলুদের রস খান। রাত্রে ডিনারের সাথে সপ্তাহে ২ দিন এককোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এছাড়া, স্ট্রবেরী, জিনসেং, জিংকো বাইলোবা ইত্যাদি খেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী থাকে।