বিভিন্ন ফল পাকাতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল থেকে কি হতে পারে নানাবিধ নার্ভ ও মানসিক রোগ?

বিভিন্ন ফল পাকাতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল থেকে কি হতে পারে নানাবিধ নার্ভ ও মানসিক রোগ?

Do Fruit Chemicals cause Neuro-Psychiatry Diseases?

Author : Dr. Jakir Hossain Laskar, PhD

আমাদের খাদ্য তালিকায় রোজ দু’একটা ফল থাকলে ভালো। পুষ্টি-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সাধ্যের বাইরে গিয়েও আমরা অনেকেই চেষ্টা করি ফলমূল খাবার। কিন্তু সেই ফল পাকাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক ডেকে আনছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান বিপদ।

সুস্থ বা অসুস্থ সবাইকে আমরা, ডাক্তারবাবুরা, ফলমূল খাবার পরামর্শ দিই। যে ঋতুতে যেসব ফল সহজলভ্য, তা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধরনের ফলে খুবই উন্নতমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানব-মস্তিকে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে ও ব্রেন-ফাংশান স্বাভাবিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এছাড়া ফলের উপাদানের মধ্যে থাকা বিশেষ ধরণের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিক্যালসগুলোকে ধ্বংস করে দেহের নিউরো-ট্রান্সমিশন সিসটেমকে চাঙ্গা রাখে ও সার্বিকভাবে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার-কে ব্যাকটিরিয়া ভাইরাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি এই ফলগুলি পাকাতে বর্তমানে যে সব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাদের ক্ষতিকর প্রভাবে দেখা দিচ্ছে নানান জটিল স্নায়ুরোগ ও মনোরোগ।

ফল পাকাতে কি কি রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়?

ফলকে পরিপক্ক করতে প্রধানতঃ ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথিলিন ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলের সংস্পর্শে এসে অ্যাসিটিলিন-এ রুপান্তরিত হয়, যা ফলকে তাড়াতাড়ি পাকাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রোপিলিন, ইথরেল (অন্য নাম, ২-ক্লোরোইথিল ফসফোনিক অ্যাসিড), গ্লাইকল, ইথানল ইত্যাদি আজকাল যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাসায়নিকের সাহায্যে কি কি ফল পাকানো হয়?

কলা, আম, তরমুজ, আতা, সবেদা, অ্যাপ্রিকট, পেঁপে, নাশপাতি, গুয়াভা ইত্যাদি ফল পাকাতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা ফল অনেক বেশী সুস্বাদু ও খাদ্যগুনসম্পন্ন।

ফল পাকানোর রাসায়নিক থেকে কি কি নার্ভ ও মানসিক রোগ হয়/ হতে পারে?

১. মুড ডিসঅর্ডার – আবেগে বিকারগ্রস্ত এই ধরনের রোগীরা কিছুদিন খুব হৈ-চৈ আনন্দ-আহ্লাদে দিন কাটায়, মাঝের বেশ কিছুদিন মোটামুটি স্বাভাবিক মানসিক স্থিরতায় দিন অতিবাহিত করে, আর কিছুকাল অন্তর গভীর দুঃখ-দুশ্চিন্তা ও অবসাদে ডুবে যায়। সাইক্লোথাইমিক পার্সোনালিটি বা আবর্তনশীল ব্যক্তিত্বের বিকারে আক্রান্ত রোগীদের পর্যায়ক্রমে এই তিন রকমের মুড পরিবর্তন দেখা যায়।

২. এপিলেপটিক স্যিজার – এই পরিস্থিতিতে রোগীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গে খেঁচুনী শুরু হয়। মাথা ঘুরে পরে যাবার উপক্রম হয়। লক-জ্য, মুখ বেঁকে যাওয়া, দাঁতের পাটি পড়ে যাওয়া, ইত্যাদি লক্ষণ ও থাকতে পারে।

৩. মাথার যন্ত্রণা ও মাথা ঘোরা – মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হলে অনেকেই মাথায় গামছা বা ওড়না দিয়ে শক্ত করে বাঁধে। কারুর বা আবার রোদে বের হলে মাথার যন্ত্রণা ও মাথা ঘোরা শুরু হয়।

৪. মেন্টাল কনফিউশন – ফলের বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে মস্তিষ্কে ডোপামিন, সেরোটনিন-এর ক্ষরণ ব্যাহত হলে, মানসিক ভারসাম্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রোগীর মধ্যে দেখা দেয় আত্মবিশ্বাসের অভাব, ফলস্বরূপ হীনমন্যতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।

৫. সেরিব্রাল ইডেমা – নার্ভের এই রোগে নানবিধ স্নায়বিক গোলযোগ দেখা দেয়। হাত-পা কাঁপা, মাথার যন্ত্রণা, ঘাড়ে পিঠে ব্যাথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।

৬. অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া – ঘুমের সমস্যায় রোগী রাত্রে বিছানায় শুয়ে ছটফট করে কিন্তু দু’ চোখের পাতা এক করাতে পারে না। স্বল্পস্থায়ী ঘুমের জন্যে প্রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করে। ছোটরা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। কারো কারো স্লিপ-টেররের জন্য ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ ও দুঃস্বপ্ন সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭. মেমরি লস বা স্মৃতিভ্রংশতা – এই সমস্যায় শিক্ষার্থীদের মনে রাখার ক্ষমতা হ্রাস, পড়াশোনায় অমনযোগীতা ও একাগ্রতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। বড়োদের ভুলে যাওয়া ও মনোসংযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। ওয়ার্কিং মেমরি, স্প্যাটিয়াল মেমরি, এপিসোডিক মেমরি ইত্যাদির সমস্যা হতে শুরু করে।

ফল পাকানো রাসায়নিক থেকে ব্রেণ-এ কি পরিবর্তন হয়?

ক্যালসিয়াম কার্বাইড, অ্যাসিটিলিন, ইথিলিন প্রভৃতির ক্ষতিকারক প্রভাবে মস্তিষ্কে মোনো-অ্যামাইন অক্সিডেজ-এর ক্ষরণ হ্রাস পায়। কখনো কখনো সেরিব্রাল কর্টেক্স, হিপ্পোক্যাম্পাস ও অ্যামাইগডালয়েড নিউক্লিয়াস-এর মধ্যেকার সেতুবন্ধন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যার প্রভাবে মুড স্যুয়িং, কিলার ইনস্টিংট, অ্যান্টেরোগ্রেড অ্যামনেসিয়া (যাতে রোগী রিসেন্ট মেমরি ভুলে যায়), থট-ব্লকিং ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

ক্যালসিয়াম কার্বাইড একটি কার্সিনোজেনিক পদার্থ। এর বিষাক্ত প্রভাবে শরীরে ক্যানসার হবার প্রবণতা বাড়তে পারে। এছাড়া এতে স্বল্প পরিমান আর্সেনিক থাকে, যার প্রভাবে আর্সেনিক পয়জনিং হতে পারে।

কৃত্রিম উপায়ে পাকানো ফল চিনবেন কিভাবে?

কেমিক্যালের সাহাযে পাকানো ফলের গায়ের রঙ সবুজ-হলুদ ছোপ-ছোপ হয়ে থাকে। পুরোটা হলুদ রঙের হয় না। বাজার থেকে কিনে আনা ফল এক বালতি জলে ডুবিয়ে দিন – যদি ডুবে যায় তাহলে তা প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো। আর যদি ভেসে ওঠে তাহলে তা কৃত্রিম রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো।

কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়?

কেনার আগে ফল-বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে জানুন যে, ফলটি প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো কিনা। খাবার আগে ফলগুলি রানিং ওয়াটারে (জলে) ভালোভাবে ধুয়ে নিন। বাড়ীর কিচেন গার্ডেন-এ পেঁপে, আম, কলা, সবেদা ইত্যাদির চাষ করতে পারেন। ভেজালের বিষ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচাতে গৃহ-সংলগ্ন বাগানে ফল-সবজি চাষ করা যেতেই পারে। আর, কখনো রাস্তা-ঘাটের দোকানের কাটা ফল একদমই খাবেন না। ক্যানড্‌ ফ্রুট-জ্যুস বা ফ্রুট বেভারেজ সর্বদা এড়িয়ে চলবেন। খেতে হলে প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো টাটকা ফল খাওয়াই ভালো।

এইসব নার্ভ ও মানসিক রোগের চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিজ্ঞানে এই সব নার্ভ ও মানসিক রোগের সুফলদায়ক চিকিৎসা আছে। রোগের লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ করে কনস্টিটিউশনাল হোমিওপ্যাথিক ড্রাগ ও মেটেরিয়াল ডোজ থেরাপিউটিক মেডিকেশনের সাহায্যে চিকিৎসা শুরু করা হয়। এছাড়া মাইক্রো-ডোজ ক্লাসিক্যাল মেডিসিন-এর সাহায্যে স্নায়ুরোগের ফলপ্রসু চিকিৎসা আধুনিক হোমিওবিজ্ঞানের প্রমানিত সাফল্য। হোমিওপ্যাথিতে মুড স্ট্যাবিলাইজার হিসাবে বিশেষ কয়েকটি ঔষধও খুবই কার্যকরী। সঙ্গে নানাবিধ অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিকারে বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপী, সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপী, ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন এণ্ড ইনস্ট্রুমেন্টাল কণ্ডিশনিং, রেসিপ্রোকাল ইনহিবিশন টেকনিক-এর অধীনে মুড ও কন্ডাক্ট মডিফিকেশন থেরাপী চালিয়ে যেতে হবে।

Dr. Jakir Hossain Laskar: is an internationally-acclaimed Indian Homoeopath in Neuro-Psychiatry, Memory Doctor and Counseling Psychotherapist. He has been treating all types of Nerve and Mental diseases with the help of Classical Homoeopathy since 2001. Besides, he has been doing Psycho-Counseling and giving Homoeopathic treatment for students with abnormal behaviour, memory and concentration problems, learning disability, etc. Having finished his education in Homoeopathic Medical Science from Central Council of Homoeopathy (CCH) recognized by the Govt. of India, he did research-work in a special field of Psychology. As a recognition of his scientific research, he earned his PhD degree in Psychological Counseling and Psychotherapy in 2008. He is also trained in several disciplines of Neurology and Psychiatry from best British and American Universities through distant mode including Harvard Medical School (USA), King’s College London, Birmingham University (UK), etc. For a long period of time, he had been the Editor-in-Chief of a quarterly Mental Health Journal named ‘Mon Niye’ published from Kolkata. Besides practicing Neuro-Psychiatry in Homoeopathy, he has been attached as a Visiting Lecturer in the Post-Graduate Psycho-Counseling Dept. of a reputed private educational institute.